বাজারে মূলত তিন ধরনের কম্পিউটার পাওয়া যায়।
১। নতুন কম্পিউটার
নতুন কম্পিউটার হল ফুল ইনট্যাক। এগুলর সব পার্টসই আপনি নতুন পাবেন । যা বাজারের সব দোকানেই পাওয়া যায়। এসব পার্টসের আলাদা আলাদা ওয়ারেন্টি পাবেন এবং ওয়ারেন্টি শেষে ফ্রী সার্ভিসিং পাবেন। তবে নতুন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বাজার মূল্য মাথায় রাখবেন । তাই নতুন কম্পিউটারের ক্ষেত্রে কোন ঝামেলা নেই।
২। রিফ্রাব্রিশ কম্পিউটার
রিফ্রাব্রিশ কম্পিউটার নতুন ও না আবার পুরাতন ও না। এটা হল নতুন পুরাতন এর মিশ্রণ। মনে করেন এসব কম্পিউটারের সব কিছুই পুরাতন কিন্তু মাদারবোর্ড টা নতুন। অথবা র্যম ও গ্রাফিক্স কার্ড নতুন বাকি সব পুরাতন। রিফ্রাব্রিশ কম্পিউটার কেনার ক্ষেত্রে পার্টসের ফিজিক্যাল ড্যামেজ আছে কিনা দেখে নিবেন। আর যেসব পার্টস নতুন সেগুলোর ওয়ারেন্টি কার্ড বুজে নিবেন। এসব কম্পিউটার কিনার জন্য এক্সপার্ট কাওকে সাথে নিয়ে কিনবেন।
৩। পুরোনো কম্পিউটার
এরপর হল পুরোনো কম্পিউটার। সহজ ভাষায় বললে এগুলো ব্যবহার করা। অন্য কেউ ৬ মাস বা ১ বছর ব্যবহার করার পর বিক্রি করে দেবে, এক্ষেত্রে পুরোনো ব্রান্ড পিসি কেনা ভাল। পিসিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটা জেনে নিবেন, পারলে নিজে দেখে নিবেন। চেষ্টা করবেন রানিং কম্পিউটার কেনার জন্য। ২/১ মাস বন্ধ ছিল এমন কম্পিউটার কিনবেন না। এসব কম্পিউটার কিনলে ঝামেলাতে পরতে পারেন। তাই না কেনাই ভাল।
উপরোক্ত ব্যাপারের দিকে লক্ষ্য রেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিন কোনটা কিনবেন। তবে আমার ধারনা হল পুরাতন পিসি কেনার ক্ষেত্রে পুরাতন ব্রান্ড পিসি কিনবেন যদি না পান তবে নতুন পিসি কেনাই ভাল। অনেক সময় দেখা যায় কেউ টাকার প্রয়োজনে ভাল মানের পিসি বিক্রি করে দেয়, পারলে সেগুল কেনার চেষ্টা করবেন। সেগুলো আপনি নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন কোন ঝামেলা নেই।
নতুন পিসি কেনার আগে:
কেসিংঃ
সিপিইউ এর বাহ্যিক আবরণটাকে কেসিং বা কেইস বলে। কম্পিউটার কেনার সময় দোকানদার আপনাকে একটি নরমাল কেসিং দিতে পারে। তবে আপনি উন্নত মানের কেসিং দিতে বলবেন। কেসিং এর মূল্য এক হাজার থেকে দশ হাজার পর্যন্ত অথবা এর থেকেও বেশি হতে পারে। এক্তা ব্যাপার মনে রাখবেন কেসিং এর মানের উপর পিসির পারফরমেন্স নির্ভর করে না।
মিডিয়া ড্রাইভঃ
আগের পিসি গুলতে শুধু সিডি ড্রাইভ দেয়া থাকতো। কিন্তু এখন সব ডিভিডি ড্রাইভ হয়ে গেছে। এর মানে হল একই ডিস্কে গান/মুভি দেখতে পারবেন আবার রাইট করতে ও পারবেন। তবে এখন কেউ ডিভিডি ব্যবহার করে না। তাই কম্পিউটারে এসব না লাগালে আপনার খরচ ১০০০-১৫০০ টাকা করে যাবে।
হার্ড ডিস্কঃ
হার্ড ড্রাইভ হচ্ছে স্টোরেজ ডিভাইস যেখানে আপনার পিসির সকল ডাটা জমা থাকবে। তাই ভালো মানের এবং ভালো সাইজের হার্ড ড্রাইভ কিনুন। আর আপনি HDD বা SSD কোনটা ব্যবহার করবেন সেটাও আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিন। HDD বা হার্ডডিক্স ড্রাইভ হলো বর্তমান যুগের হার্ড ড্রাইভ যেখানে আপনি তুলনামূলক কমমূল্যে অধিক সাইজ পাবেন। আর অন্যদিকে SSD ড্রাইভে আপনি ভালো স্পিড পাবেন । মানে ডাটা দ্রুত কপি পেস্ট করতে পারবেন। তবে HDD এর তুলনায় SSD এর টেকসইতা কম এবং স্টোরেজ সাইজও কম এবং দামও বেশি। SSD সাধারণত ট্যাবলেট বা নোটবুকগুলোতে আপনি দেখতে পাবেন। একটা কথা মনে রাখবেন হার্ড ড্রাইভের স্পিড পিসির টোটাল পারফরমেন্সকে প্রভাবিত করে তাই ভালো মানের হার্ড ড্রাইভ কিনতে চেষ্টা করুন।
প্রসেসর:
- কি টাইপের প্রসেসর কিনবেন এবং
- কি টাইপের প্রসেসর আসলেই দরকার
যদি শুধুমাত্র গান শোনা কিংবা মুভি দেখা অথবা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য পিসি কিনেন তাহলে সাধারণত প্রসেসরেই কাজ হয়ে যাবে।
- পরের যে জিনিসটি প্রসেসর কেনার সময় খেয়ার রাখতে হবে সেটা হলো প্রসেসরের ব্রান্ড। অবশ্যই উন্নত মানের ভালো ব্রান্ডের সিপিইউ কেনা উচিত। সস্তা চাইনিজ সিপিইউ কেনবেন না। ব্রান্ডের সিপিইউ যেমন Intel, AMD প্রসেসর কেনা উচিত। আর আপনার প্রসেসরে উপর আপনার মাদারবোর্ড নির্ভর করে। যেমন বর্তমানে কোর আই ৯ প্রসেসর শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি মাদারবোর্ডেই সার্পোট করে।
- এরপর যে জিনিসটি আপনার মনে রাখতে হবে সেটা হলো প্রসেসরের হিট সিঙ্ক সিস্টেমটি কেমন রয়েছে। হিট সিঙ্ক এর মাধ্যমে প্রসেসর চলমান অবস্থায় ঠান্ডার রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়। কোনো প্রসেসরে হিট সিঙ্ক নেই বা ডেমেজ কিংবা খারাপ হিট সিঙ্ক থাকলে সেটা কেনা উচিত নয়।
প্রসেসর কেনার সময় আরেকটি বিষয় দরকার যেটি হলো প্রসেসর কুলিং ফ্যান। হিট সিঙ্ক এর পর যে জিনিসটি আপনার প্রসেসরকে ঠান্ডা রাখবে সেটা হলো কুলিং ফ্যান। বাজারে ২০০-৫০০ টাকায় বিভিন্ন প্রসেসর কুলিং ফ্যান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে যেকোনো একটিকে লাগিয়ে নেবেন।
গ্রাফিক্স কার্ড:
যারা নরমাল কাজ করার জন্য পিসি কিনবেন তাদের জন্য আলাদা করে গ্রাফিক্স কার্ডের দরকার হবে না। কিন্তু যারা গ্রাফিক্সের কাজ করেন অথবা গেমস খেলার জন্য পিসি কিনছেন তাদের জন্য অবশ্যই একটি ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন। গ্রাফিক্স কার্ড আর র্যামের সঠিক কম্বিনেশন আপনার পিসিকে সুপার ফাস্ট করে তুলতে পারে! আপনি খুব সহজেই আপনার পিসি গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে আপগ্রেড করতে পারেন ।
- গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে যে জিনিসটি লক্ষ্য করবেন তা হলো গ্রাফিক্স কার্ডটি আপনার মাদারবোর্ড এর সাথে সার্পোট করবে কিনা। এর জন্য কার্ড কেনার আগে আপনার মাদারবোর্ডের মডেল আর কার্ডের মডেল গুগলে অনুসন্ধান করে নিন।
- উন্নত মানের গ্রাফিক্স কার্ড সঠিক ভাবে চালানোর জন্য প্রচুর পরিমানের পাওয়ারের দরকার হয়। এর জন্য হয়তো বা আপনাকে নতুন পাওয়ারফুল PSU কিনতে হতে পারে। সে দিকটা খেয়ার রাখুন।
- এবার আপনার কত পরিমাণের গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করুন। ১ জিবি নাকি ২ জিবি নাকি আরো বেশি?
এরপর ভাল ব্রান্ড নির্বাচন করুন। বর্তমানে বাজারে Nvidia এবং AMD এই দুটি ব্রান্ডের গ্রাফিক্স কার্ড বেশি চলছে।
গ্রাফিক্স কার্ডও গরম হয়। তাই গ্রাফিক্স কার্ডের কুলিং সিস্টেম সম্পর্কে জেনে নিন। নতুন মডেলের গ্রাফিক্স কার্ডে কুলিং ফ্যানের বদলে লিকুইড কুলিং সিস্টেম থাকে।
মাদারবোর্ডঃ
কম্পিউটারের CPU এর যত মূল যন্ত্রাংশ রয়েছে সেগুলো সবই এই মাদারবোর্ডের উপর স্থাপিত হয়ে থাকে। তাই কোয়ালিটিযুক্ত মাদারবোর্ড কেনার চেষ্টা করবেন। চাইনিজ, সস্তা এবং সেকেন্ড হ্যান্ড মাদারবোর্ড কখনোই কিনবেন না। মাদারবোর্ড কেনার আগে এতে গ্রাফিক্স কার্ড এর স্লট কয়টা, র্যাম স্লট কয়টা, ইউএসবি পোর্ট কতগুলো আছে এগুলো যাচাই করে কিনবেন।
র্যামঃ
র্যামের কাজ হলো আপনার পিসিকে চলমানরত কাজগুলোকে দ্রুত সম্পন্ন করে তোলা। যত বেশি র্যাম লাগাবেন ততবেশি দ্রুত কম্পিউটারে কাজ করতে পারবেন। বর্তমান যুগে ৪ গিগাবাইট র্যাম হচ্ছে স্ট্যার্ন্ডাড লাইন। তবে আপনি যদি গেমার হন কিংবা গ্রাফিক্সের কাজ করেন তাহলে আপনাকে র্যাম বাড়াতে হবে। র্যাম কেনার আগে সেটা মাদারবোর্ড এর সাথে DDR এর মিল আছে কিনা সেটা লক্ষ্য করবেন। সাধারণত র্যাম নস্ট হয় না তাই সেকেন্ডহ্যান্ড র্যাম কিনতে পারেন তবে ব্যবহার হয় না বা ফেলে রাখা হয়েছে এমন কোনো র্যাম কিনবেন না।
0 Comments